রাষ্ট্রীয় সব দপ্তরই গুরুত্বপূর্ণ। তার ও সরকারের অধীনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের দপ্তর বা অফিসগুলোও কম না। রাষ্ট্র ও সরকারের গৃহীত কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে ওই অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাই পরিচালনা করে থাকেন। কিন্তু সেখানে তাদের ভূমিকা যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়; তবে তা রাষ্ট্রের নাগরিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। সেক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অসৎ উদ্দেশ্যের দায়-ভার কে নেবে? বলছি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাব- রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কথা।
সম্প্রতি গোবিন্দগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করার অকল্পনীয় দুটি ঘটনা ঘটেছে। এদের একটি গত ২০ জুন রবিবার সম্পাদিত হেবা দলিল নম্বর ৭৪৬৪; অপরটি ৩১ অক্টোবর রবিবার জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি দলিল আটক; ভুয়া দাতা, সনাক্তকারী, গ্রহীতা ও দলিল লেখককে আটক করলেও ছাড়া পাওয়ার বিষয়টি।
এর মধ্যে ৭৪৬৪ দলিলের দাতার মৃত্যু হয় ১২ জুন ২০২১ তারিখে। কিন্তু তাকে দাতা সাজিয়ে ৩ একর ৩৩ শতক জমি হেবা দলিল সম্পাদন হয়েছে এই কার্যালয়ে। এই জমি থেকে পৈত্রিক সূত্রে অংশীদারিত্ব হারায় দাতার ঔরসজাত কয়েকজন সন্তান। বিষয়টি প্রকাশ হলে জাল-জালিয়াতির সহযোগিরা স্থানীয়ভাবে দরবার করে তা মিমাংসার চেষ্টা করছে।
অপরদিকে ৫৫ শতক জমির হেবা দলিল ৩১ অক্টোবর সাব-রেজিস্ট্রারের সম্মুখে উপস্থাপিত হলে অফিসে উপস্থিত একই এলাকার কয়েকজনের সন্দেহজনক কথাবার্তায় বাধ্য হয়ে সাব-রেজিস্ট্রার দালিলটি জব্দ করেন এবং দাতা-গ্রহীতা-সনাক্তকারী ও দলিল লেখককে আটকের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। এর ফলে প্রকৃত জমির মালিক ও তার উত্তরাধিকারীগণ নিঃস্ব হওয়ার পক্রিয়া থেকে রেহাই পান।
এমন দুটি স্পর্শকাতর ঘটনায় সাব-রেজিস্ট্রার অফিস নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিন্তু দলিল লেখক, অফিস ও তার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ দায় না নিলে নেবে কে? যদিও কর্মকর্তা বলেছেন, জাল-জালিয়াতির দলিলটি আটক করা হয়েছে; দলিল লেখক দু’জনের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে; সীমাবদ্ধতা থাকায় ধৃত ব্যক্তিদের আটকে রাখা যায়নি এবং মৃত ব্যক্তির দলিলটি বাতিল করার ক্ষমতা না থাকলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
সরকারের এই অফিসে পর পর দুটি ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। না-জানি ওই অফিসে আরও কত অঘটন ঘটনার স্ত‚পে চাপা পড়ে আছে। তা খতিয়ে দেখা অতি জরুরি। সেই সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে নজির স্থাপন করা হোক। সেই সাথে জনমনে ‘সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া’ নেতিবাচক মনোভাবের পরিবর্তন হবে এমনটাই সবার চাওয়া।