1

মাদক মুক্ত গাইবান্ধা চাই-মহাপরিচালক আব্দুস সবুর মণ্ডল

এম.এ ইসলাম:
গাইবান্ধা জেলাকে মাদকমুক্ত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার আশ্বাস দিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুস সবুর মণ্ডল পিএএ। অধিদপ্তরে গত ২৪ জুন অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং পরবর্তীতে মহাপরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম পর্যালোচনা সভায় গোবিন্দগঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ আহবান জানান।

শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদের হলরুমে উপজেলা প্রশাসন গোবিন্দগঞ্জ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গাইবান্ধা জেলা কার্যালয়ের আয়োজনে মাদক পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আব্দুস সবুর মণ্ডল, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান, পৌর মেয়র মুকিতুর রহমান (রাফি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাদেকুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার র‌্যাব ক্যাম্প গাইবান্ধার মো. আবদুর রাজ্জাক খান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাঈদের সভাপতিত্বে পর্যালোচনা সভায় অংশ নিয়ে উপস্থিত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধি ও মিডিয়া কর্মীরা বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আব্দুস সবুর মণ্ডল বলেন, মাদকের হাত থেকে রাষ্ট্র ও দেশকে রক্ষা করা আমার দায়িত্ব। সে দায়িত্ব আমি যথাযথভাবে পালন করব। গোটা বাংলাদেশে মাদক বিরোধী আন্দোলন শুরু হবে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম এই সভায় তিনি বর্তমান সরকারের ২০১৮ সালের নির্বাচন ইশতেহারে স্থান পাওয়া মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণাকে বাস্তবায়ন করতে চান।

সুধীজনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি জানান, সারাদেশে ২১৭টি দেশীয় মাদক বিক্রির লাইসেন্স রয়েছে। যার একটি এই গোবিন্দগঞ্জে। সরকার বিগত ১৯৯৬ সালে এমন লাইসেন্স প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে। এর পর আর কোনো দেশীয় মাদকের লাইসেন্স দেয়া হয়নি। তবে বারের লাইসেন্স চালু রয়েছে।

তিনি আরও জানান, মাদকাসক্তকে রোগী হিসেবে দেখবেন। তারা যেন স্বাভাবিকভাবে এই সমাজে ফিরে আসতে পারে। সরকার তাদের জন্য আন্তরিক। এজন্য সারাদেশে বেসরকারিভাবে ৩৬৬টি মাদকাসক্তদের নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু রংপুর বিভাগের পাঁচটি জেলায় কোনো নিরাময় কেন্দ্র নাই। সেবামূলক এ ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়তে তিনি উৎসাহ দেন।

নিজের জন্মস্থান উল্লেখ করে গোবিন্দগঞ্জ তথা গাইবান্ধা জেলাকে মাদক মুক্ত করতে তিনি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, সমাজের সুধীজনদের সহযোগিতা কামনা করেন। এজন্য গাইবান্ধায় যা যা প্রয়োজন তার সবই পূরণের আশ্বাস দেন।

এর আগে গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এ কে এম মেহেদী হাসান তাঁর বক্তব্যে মাদক এ উপজেলায় মাদক গ্রহণের পটভূমি, মাদক ব্যবসায়ী আটক, মাদক উদ্ধার ও থানা পুলিশের পরিচালিত কর্মপন্থার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

এক পরিসংখ্যানে তিনি জানান, ২০১৯ সালে এ উপজেলা থেকে ১ কোটি ৯৫ লাখ, ২০২০ সালে ১ কোটি ৫ লাখ এবং ২০২১ সালে এ পর্যন্ত ৩৩ লাখ টাকার মাদক উদ্ধার করেছেন।

শেষে তিনি জানান, একার পক্ষে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও উপজেলাকে মাদক শুন্য করা সম্ভব নয়। তিনি উপজেলায় কার্যকর ২১টি বিট পুলিশের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রতিটি পরিবার, সমাজ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, জনপ্রতিনিধিসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

প্রসঙ্গত, বর্তমান বাংলাদেশে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যায় প্রায় ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন। এর মধ্যে শিক্ষিতের সংখ্যা প্রায় ৪৮ শতাংশ ও অশিক্ষিত ৪০ শতাংশ। যার ৫৭ শতাংশ যৌন অপরাধী। আর এক লাখ ৬০ হাজার মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে ২৭ হাজার ৩০০ জন মহিলা। এখন পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকা ২৪ ধরনের মাদক উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে গাঁজা, চোলাই মদ, ফেন্সিডিল, হেরোইন, বিদেশি মদ, প্যাথেড্রিন, ডিনেচার্ড স্পিরিট, ভাং, বিয়ার, তাড়ি, বুপ্রেনরফিন, কোডিন ট্যাবলেট, ফার্মেন্টেড ওয়াশ, মরফিন, ভায়াগ্রা, টলুইন, আইস পিল, সানাগ্রা, পটাসিয়াম পারম্যাংগানেট ও মিথাইল-ইথাইল কিটোন।