গোবিন্দগঞ্জে নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে সুপারদের অনৈতিক কাণ্ড
প্রতিষ্ঠানে তালা ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
এম.এ ইসলাম:
সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সম্প্রতি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকায় স্থান পায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ১০টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া মাপকাঠিতে বিগত বছরগুলোর পাশের হার ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু কাগজপত্রে জাল-জালিয়াতি করতে না পারলেও প্রতিষ্ঠান প্রধানরা অবকাঠামো, প্রতিষ্ঠানের জমি ও শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে ভয়ঙ্কর জাল-জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে। ফলে উপজেলায় এমপিওভুক্ত হওয়া ১০টি প্রতিষ্ঠানের প্রায়গুলোতে দেখা দেয় অন্তন্দ্বদ্ব। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হরিপুর শহরভানিয়া দাখিল মাদ্রাসা, খারিতা দাখিল মাদ্রাসা, নাছিরাবাদ আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা ও মোগলটুলি শাহ্ দেওয়ান বালিকা দাখিল মাদ্রাসা অন্যতম। স্থানীয়রা এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ তুলেছে। কোন প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ভবনের চারপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। কোথাওবা অন্তন্দ্বদ্বে স্টাফদের সাথে এলাকাবাসীযুক্ত হয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সজেমিনে হরিপুর শহরভানিয়া দাখিল মাদ্রাসা:
প্রতিষ্ঠানটিতে সুপার ইচ্ছা মাফিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের পদ-পদবি পরিবর্তন করে অনলাইনে ব্যানবেইস প্রেরণ করেছে মর্মে অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষক ও কর্মচারী। অফিস সহকারী পদ থেকে মো. আজাদুল ইসলাম (খাজা) কে বাদ দিয়ে জুনিয়র শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে উক্ত পদে এবং জুনিয়র শিক্ষক পদে সম্প্রতি ব্যাক ডেটে সুপারের আত্মীয় সাবানাকে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় গোবিন্দগঞ্জ প্রেস ইউনিয়ন কার্যালয়ে ভুক্তভোগী জুনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম ও অফিস সহকারী আজাদুল ইসলাম (খাজা) সংবাদ সম্মেলনে এর বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন। এ ঘটনার পরদিন শনিবার সকালে স্থানীয়রা ওই প্রতিষ্ঠানের সবকটি ক্লাশ রুমে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ফলে দিনভর সেখানে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
খারিতা দাখিল মাদ্রাসা:
এমপিওভুক্তির ঘোষণা আসার পরপরই প্রতিষ্ঠানটির মূল ভবনের চারপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে বিক্ষুব্ধ স্টাফ ও এলাকার সাধারণ জনগণ। তাদের দাবি প্রতিষ্ঠানটিতে অনৈতিকভাবে পাঁচজন শিক্ষক ব্যাকডেটে নিয়োগ দেখানো হয়েছে। ফলে পূর্বে থেকে কাজ করে আসা ব্যক্তিরা বঞ্চিত হলে তারা নিজেদের জমি বাঁশের বেড়া দিয়ে দখলে নেয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি খারিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত রুমে ক্লাশ চালাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে সুপার জানান, এটি তাদেরই ভবন! যা প্রশ্নের সৃষ্টি করে? এছাড়া তিনি নতুন করে ব্যাকডেটে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ প্রতিষ্ঠানের নামে জমির দলিল ও খারিজ থাকলেও মাঠ পর্চা ও খতিয়ান তাদের নামে নেই। রয়েছে ব্যক্তি মালিকানায়।
অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। শুরুতে খারিতা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা এবং খারিতা মীর হাসান আলী দাখিল মাদ্রাসার জমি খারিতা দাখিল মাদ্রাসার নামে দেখিয়ে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন দখলকারীরা। তবে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কোনো সাইনবোর্ড না থাকলেও রয়েছে খারিতা স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার সাইনবোর্ড। যা বর্তমানে তারা নিজের সাথে সংযুক্ত দাবি করছে।
নাছিরাবাদ আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা
প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তির তালিকায় আসার পর অধিকাংশ শিক্ষকরা সরব হয়েছে। এর আগে পাঠদানে সম্পৃক্ত না থেকে তারা ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।
এমপিওভূক্তির আগে প্রতিষ্ঠানটিতে ছিল শিক্ষক সংকট। ঘোষণা আসার পরপরই তারা তাদের মূল কাগজপত্রে নতুন নতুন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেখিয়ে বেতন-ভাতা নেয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন।
মোগলটুলি শাহ দেওয়ান বালিকা দাখিল মাদ্রাসা
প্রতিষ্ঠানটিতে নিজেদের জায়গা-জমি সহ শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য ও বিভিন্ন সনদপত্রের জালজালিয়াতি কাগজ দাখিলের মাধ্যমে ব্যানবেইস পূরণের অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসী।
এমন অবস্থায় প্রকৃত শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের স্ব-স্ব পদ ফিরে পাবে। একডেমিক ভবনগুলো উদ্ধার হবে। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন ভাতার সরকারি অংশ পেয়ে আরও সুন্দর পাঠদান চালিয়ে যাবে এমনটাই কামনা।