খোলা হাওয়া প্রতিবেদক:
‘কারাম উৎসব’ উৎযাপন কমিটি ও ‘অবলম্বন’ এর আয়োজনে এবং ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ এর সহযোগিতায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘কারাম উৎসব’ পালিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের পশ্চিম দইহারা গ্রামে এ উৎসব পালিত হয়। উৎসবে পাশ্ববর্তী নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ওড়াঁও জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন যোগ দেয়। উৎসবে তাঁরা তাদের নিজস্ব ভাষা, সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরে।
ওড়াঁও সম্প্রদায় সমতলের আদিবাসীদের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। এদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম পূজা। বংশ পরম্পরায় যুগ যুগ ধরে প্রতি বছর উত্তরের সমতল ভূমির ওড়াঁও সম্প্রদায় এই কারাম উৎসব পালন করে। তবে গাইবান্ধায় দ্বিতীয় বারের মতো এই উৎসব পালিত হয়েছে।
কারাম উৎসব উৎযাপন কমিটির আহবায়ক সুরেন তিগ্যারের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শাখাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাহাজুল ইসলাম, আদিবাসী নেতা গৌর চন্দ্র পাহাড়ী, মিলন তিগ্যা, জিসাই তিগ্যা, অবলম্বনের প্রজেক্ট অফিসার শাবানা আকতার, অবলম্বনের ফিল্ড অফিসার মাজেদুল ইসলাম, সখী রানী পাহাড়ী, আদিবাসী আবিনা টপ্য, সরলা মিনজি, লিটন তিগ্যা প্রমুখ।
কারাম একটি গাছের নাম। ওড়াঁও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের কাছে এটি একটি পবিত্র গাছ। মঙ্গলেরও প্রতীক। প্রতি বছর বংশপরম্পরায় পালন করা হয় এই পূজা। এ উৎসবকে ঘিরে মুখরিত হয় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ওড়াঁও সম্প্রদায়ের বসবাসরত এলাকাগুলো।
পূজার সময় আদিবাসীদের দুই সহোদর ধর্মা ও কর্মার জীবনী তুলে ধরেন তাদের ধর্মগুরু। আদিবাসী বিশ্বাস করে ধর্ম পালন করায় ধর্মা রক্ষা পান সব বিপদের হাত থেকে। আর কর্মা ধর্ম পালন না করায় তার ক্ষতি হয়। উৎসবে ওড়াঁও সম্প্রদায়ের লোকজন উপবাস করে কারাম গাছের ডাল কেটে আনেন। কারাম ডাল কেটে অস্থায়ী মন্ডপে পুঁতে রেখে পূজা-অর্চনা আর নাচ-গান ও কিচ্ছা বলার মধ্য দিয়ে এই উৎসব শুরু হয়। এ সময় পুরো এলাকা হয়ে ওঠে ওড়াঁও সহ সব সম্পদায়ের মিলনমেলা।
পূজা শেষে কারাম ডাল উঠিয়ে গ্রামের তরুণ-তরুণী সহ সব বয়সের নারী-পুরুষ নেচে-গেয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুকুরের জলে বিসর্জন দেন। আদিবাসীরা এ কারাম উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন। এ উৎসবে বিভিন্ন জেলার সাংস্কৃতিক দল তাদের নাচ-গান পরিবেশন করেন।
কারাম উৎসব উৎযাপন কমিটির সুরেন তিগ্যা বলেন, প্রতি বছরই কারাম উৎসব বিভিন্ন এলাকায় হয়ে থাকলেও গাইবান্ধা আমরা দ্বিতীয় বারের মত এই উৎসবের আয়োজন করেছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে আশা করি প্রতি বছর আমরা এই আয়োজন করবো।
তিনি আরো বলেন, এ উৎসবে দুই সহোদর ধর্মা ও কর্মার জীবনী তুলে ধরা হয়। এতে করে আমাদের সংসারে অভাব-অনটন দূর হয়ে যায়। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে রক্ষা হয়। এই বিশ্বাস থেকে বংশপরম্পরায় ওড়াঁও সম্প্রদায়ের মানুষ এই কারাম ডাল পূজা করে আসছে।
অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী বলেন বলেন, এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য আদিবাসীদের নিজেদের ভাষা, সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরা। আদিবাসীদের ভাষা সংস্কৃতি এ দেশের সম্পদ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের পরিচায়ক। আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এটা রক্ষার্থে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এসম উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা জাকারিয়া ইসলাম।